স্বদেশ ডেস্ক:
– বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবের অতিরঞ্জিত ইতিহাস
– যুক্ত হচ্ছে জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা
বিগত এক যুগ ধরে সব শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের মলাটে যুক্ত হয়েছে শেখ হাসিনার ছবি; কিন্তু আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা যে পাঠ্যবই হাতে পাবে সেখানে থাকবে না শেখ হাসিনার কোনো ছবি। ইতোমধ্যে বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করে সেখানে পুরনো কারিকুলামকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনি পুরো কারিকুলাম পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ধাপে আওয়ামী সরকারের প্রবর্তিত জনধিকৃত ডিম ভাজি আর আলু ভাজি শেখানোর কারিকুলাম পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হবে। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০২৫ সাল) শিক্ষার্থীরা যে নতুন বই হাতে পাবে সেখানে বিদ্যমান কারিকুলামের বেশ কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান পাঠ্যবইয়ের মলাটের শেষ পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনার ছবিজুড়ে দেয়া হয়েছে। আগামী বছরের জন্য মুদ্রিত নতুন পাঠ্যবইয়ের শেষ পাতায় শেখ হাসিনার ছবি থাকবে না। সেখানে শিক্ষামূলক কোনো উক্তি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্য দিকে নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে বিশেষ করে ইতিহাস বা সমাজবিজ্ঞান কিংবা বিশ্বপরিচয় বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যেভাবে অতিরঞ্জিত ইতিহাস সংযুক্ত করা হয়েছে সেখানে পরিমার্জন করা হবে। ভুল ইতিহাস বা বিকৃতি ইতিহাস আর থাকবে না। তবে দেশ মাতৃকার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা জিয়াউর রহমান প্রত্যেকের প্রাপ্য সম্মান এবং সঠিক ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানার জন্য শেখার জন্য পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরা হবে। দীর্ঘ দিন ধরেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা না হলেও নতুন কারিকুলামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) বিভিন্ন শাখাপ্রধান এবং শিক্ষাক্রমের দায়িত্বে থাকা (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) সদস্যদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়। পাঠ্যবইয়ের বর্তমান কারিকুলাম পরিমার্জনের জন্য বিতর্কিত সব বিষয় সংশোধনের পর সম্পাদনা বিভাগ চূড়ান্ত করে মুদ্রণে পাঠাবে। তবে পাঠ্যসূচি বা কারিকুলাম নিয়ে এখনো সংশোধন কিংবা পরিমার্জনের কাজ চলছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিতর্কিত কারিকুলাম পরিমার্জন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্র্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই বিদ্যমান কারিকুলামের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। অনেকেই আবার এই কারিকুলামকে ডিম ভাজি আর আলু ভাজির কারিকুলাম বলেও আখ্যায়িত করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার কারো কোনো কথাতেই কর্ণপাত করেনি। সরকার একতরফাভাবে বিতর্কিত এই শিক্ষা কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
এ দিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগর সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্বভার নেয়ার পর প্রথমেই বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য এখন যে পাঠ্যবই ছাপার প্রস্তুতি চলছে, সেই বইয়ের পাঠ্যসূচিতে পরিমার্জন বা পরিবর্তনের কাজও শুরু করা হয়েছে। বিদ্যমান কারিকুলামে নবম শ্রেণীতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেয়া হলেও নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারো নবম শ্রেণীতে বিভাগ বিভাজনের (আর্টস, সাইন্স, ব্যবসায় শিক্ষা) সুযোগ দিচ্ছে। আর এ বছর যারা নবমে শ্রেণীতে আছে তারা আগামী বছর (২০২৫ সাল) দশম শ্রেণীতে উঠে যাবে। তারাও এক বছরের জন্য বিভাগ পছন্দ করার সুযোগ পাচ্ছে। তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তকও সেভাবেই রচিত হচ্ছে।
সূত্র মতে, বিগত দিনে পাঠ্যবইয়ের পাতায় পাতায় যেভাবে ইতিহাসের বিকৃতি করা হয়েছে নতুন পাঠ্যবইয়ে তা বাতিল করা হচ্ছে। অর্থাৎ ইতিহাসের অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণের ধারা পাঠ্যবইয়ে আর থাকবে না। তবে দেশমাতৃকার জন্য যে বা যার যতটুকু অবদান রয়েছেন সেই বিষয়গুলো সম্মানজনকভাবেই পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা হবে।
আওয়ামী সরকারের চাপিয়ে দেয়া বিতর্কিত কারিকুলাম পরিমার্জনের কাজের সাথে যুক্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাখাল রাহা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, পাঠ্যবইয়ে আমরা কাউকে ছোট বা বড় বানাতে চাই না। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যার যতটুকু অবদান ছিল বা রয়েছে আমরা তা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরতে চাই। তবে ইতিহাসের বইয়ের অতিরঞ্জিত বিষয়গুলো বাদ দেয়ার প্রস্তাব করছি। একই সাথে দেশের কৃষ্টি কালচার বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করে এমন সব বিষয়ও বাদ দেয়া হচ্ছে। একটি কথা পরিষ্কার, আমাদের পক্ষে হয়তো এক বছরে সব পরিবর্তন বা পরিমার্জন সম্ভব হবে না। তবে এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে কয়েক ধাপে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের কাজ চলবে।
এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক মাধ্যমিক) প্রফেসর মো: সাইদুর রহমান জানান, এক বছরেই সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। কেননা আমাদের মাথায় রাখতে হবে বছরের প্রথম দিনেই কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে হবে। তাই ইতোমধ্যে যেসব শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য টেন্ডার চূড়ান্ত করা হয়েছে সেগুলো বাতিল না করে বরং দ্রুততম সময়ে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে মুদ্রণের কাজে হাত দিতে হবে। ফলে আগামী দুই-তিন মাস আমাদের কাজের ব্যস্ততাও অনেক বাড়বে। সবকিছু ঠিক থাকলে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা বই পাবে।